শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪২ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেক্স :যমুনার পানি বাড়তে থাকায় তৃতীয় দফায় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে সিরাজগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে। এর আগে দু’দফায় বন্যা আক্রান্ত হন যমুনাপাড়ের মানুষ।
দ্বিতীয় দফায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যা শেষে মাত্র কয়েকদিন আগেই আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছিলেন মানুষ। ঠিক সেই সময় আবার যমুনায় পানি বাড়তে থাকায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তারা। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সিরাজগঞ্জ ও কাজিপুর পয়েন্টে যমুনার পানি বাড়তে থাকায় আবার বন্যার শঙ্কা করছেন জেলার পাঁচটি উপজেলার চরাঞ্চলের ৪০টি ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ।
বুধবার (১৯ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দেওয়া তথ্য মতে, যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার ও কাজিপুর পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিরাজগঞ্জে গত এক সপ্তাহে ৪২ ও কাজিপুরে ৫১ সেন্টিমিটার বেড়েছে।
পাউবো সূত্রে জানা যায়, জুন মাসের প্রথম থেকেই যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ ও কাজিপুর পয়েন্টে বাড়তে শুরু করে। ২৮ জুন উভয় পয়েন্টেই বিপৎসীমা অতিক্রম করে। এরপর ৪ জুলাই থেকে আবার কমতে শুরু করে এবং ৬ জুলাই বিপৎসীমার নিচে নেমে যায় যমুনার পানি। ৯ জুলাইয়ের পর দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে এবং ১৩ জুলাই যমুনার পানি দ্বিতীয় দফায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে। টানা ২৫ দিন দীর্ঘস্থায়ী বন্যার পর ৭ আগস্ট যমুনার পানি উভয় পয়েন্টেই বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে। ১১ আগস্ট পর্যন্ত কমতে থাকলেও ১২ আগস্ট থেকে আবার পানি বাড়তে শুরু করে। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে জেলার সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের অন্তত কয়েক লাখ মানুষ বন্যার কবলে পড়েন। যাদের অনেকেই এখনও পানিবন্দি। বাড়িঘর ফেলে উঁচু স্থান কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন অসংখ্য মানুষ। অনেকেই বাড়ি ফিরেছেন, আবার অনেকে ফেরার প্রস্তুতি নিতে নিতেই আবার বন্যার কবলে পড়েছেন।
সদর উপজেলার মেছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ মাস্টার বলেন, চরাঞ্চলের মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। কিছু কিছু উঁচু জায়গায় পানি নেমে গেলেও নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর এখনও ডুবে রয়েছে।
কাওয়াকোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম ভুইয়া বলেন, তার ইউনিয়নের প্রায় ১৯টি গ্রামই নিচু এলাকায়। এসব গ্রাম থেকে এখনো বানের পানি নেমে যায়নি। তার ওপর যমুনায় আবার পানি বাড়ার কারণে নতুন করে বানের পানি প্রবেশ করছে। এসব কারণে এ অঞ্চলের মানুষগুলো চরম বিপাকে পড়েছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে যমুনায় নতুন করে পানি বাড়তে শুরু করেছে। তবে আশার কথা হলো শেষ ১২ ঘণ্টায় মাত্র ১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে আগামীকাল থেকেই পানি কমতে শুরু করবে। তবে দীর্ঘদিন ধরে যমুনার পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি কিংবা উপরে থাকার কারণে চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করছে বাঁধের অভ্যন্তরে থাকা মানুষগুলো।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহিম বলেন, এখনো জেলার ৪৫টি ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
বন্যার্তদের জন্য ২৬৭ মেট্রিক টন চাল, ৩৯৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার ছাড়াও শিশুখাদ্য ও গবাদিপশুর খাদ্যের জন্য দুই লাখ টাকা করে মোট চার লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।